বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন

‘কবরস্থানের’ বিমানগুলো আবার ডানা মেলবে!

‘কবরস্থানের’ বিমানগুলো আবার ডানা মেলবে!

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা মহামারীর কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রায় থমকে গিয়েছিল৷ যাত্রীরা এখন আবার বিপুল সংখ্যায় বিমানবন্দরে ভিড় করছে৷ স্পেনের এক কোম্পানি বহুদিন ধরে অব্যবহৃত বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ করেছে৷

মাঠঘাট ও শুকনা খেতের মাঝে মরীচিকার মতো বস্তুগুলো দেখলে অবাক লাগতে পারে৷ অসংখ্য বিমান সেখানে চোখে পড়ে৷ করোনা মহামারির শুরু থেকেই স্পেনের আরাগন অঞ্চলে তেরুয়েল ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিমান রাখার জায়গা হয়ে উঠেছে৷

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার ফ্রান্স ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থার শতাধিক বিমান সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এক তৃতীয়াংশ জেট জার্মানির লুফটহানসা সংস্থার৷ করোনা মহামারীর ফলে বিমান চলাচল থমকে যাওয়ার পর সেগুলোর প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল৷

স্টেফান ভিস ও মাটিয়াস হোহর্স্ট এবার একটি এয়ারবাস বিমান ফ্রাংকফুর্টে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন৷ কারণ, মানুষ আবার বিপুল সংখ্যায় বিমানের টিকিট কাটছেন৷ এমন চাহিদা মেটাতে এই বিমানটিরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷ হোহর্স্ট বলেন, ‘জায়গাটিকে সত্যি মিউজিয়ামের মতো দেখতে লাগছে৷ বিমানবন্দরের প্রাণশক্তির কিছুই এখানে নেই৷ অদ্ভুত নীরবতা, কোনো চলাচল নেই৷ গাড়িঘোড়াও চোখে পড়ে না৷ সত্যি বিচিত্র পরিবেশ৷ ওই সময়ে আমি নিজে কোনো বিমান এখানে উড়িয়ে আনিনি৷ তবে সহকর্মীদের কাছে অনেক কিছু শুনেছি, ছবিও দেখেছি৷ সে সব দেখেশুনে জায়গাটিকে কবরস্তান মনে হয়েছিল৷ বিমানগুলো এখানে নিয়ে আসা হয়েছে৷ তখন মনে হয়েছিল সেগুলি সম্ভবত সেখানেই থেকে যাবে৷ এখন আবার আমাদের বিমান ফেরত নেবার পালা৷ সেটা অসাধারণ এক অনুভূতি৷’

তেরুয়েল ছোট শহর, জনসংখ্যা প্রায় ৩৬,০০০৷ বাতিল বিমানগুলো শহরের জন্য আখেরে সুফল বয়ে এনেছে৷ টারমাক নামের কোম্পানির ১৩০ জন কর্মীর পাকা চাকরি তো আছেই৷ সেই সংখ্যা আরো বাড়ানো হচ্ছে৷ প্রতি সপ্তাহে বেশিরভাগ বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়৷ কারণ ইঞ্জিন ও চাকা আবার আকাশে ওড়ার যোগ্য রাখা জরুরি৷

করোনা কোনো এক সময়ে নির্মূল হয়ে গেলেও টারমাক কোম্পানির কাজের অভাব থাকবে না৷ কারণ আগামী ২০ বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫,০০০ বিমান বাতিল করে টুকরো টুকরো করতে হবে৷ নির্দিষ্ট সময় ওড়ার পর অথবা বাণিজ্যিক উপযোগিতা আর না থাকলে বিমানের এমন দশা হয়৷

কোম্পানির তিন বর্গ কিলোমিটার জমিতে আর জায়গা হচ্ছে না৷ তাই দাঁড়িয়ে থাকা বিমানগুলোর পাশেই নতুন হ্যাঙার তৈরি হচ্ছে৷

টারমাক কোম্পানির প্রধান পেদ্রো সায়েস বলেন, এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপের অবস্থা অনেক ভালো৷ অ্যামেরিকায় বাতিল বিমান প্রায়ই মরুভূমিতে ফেলে রাখা হয়৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ পেদ্রো সায়েস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায়ও আমরা কিন্তু বিমানের ওজনের ৯৪ শতাংশের বেশি উপাদান উদ্ধার করি৷ দামী উপাদানগুলো উদ্ধার করে এক তালিকা করা হয়৷ মালিকের জন্য সেটা জরুরি৷ কিছু যন্ত্রাংশ আবার নতুন করে বিমান তৈরির শিল্পে কাজে লাগানো হয়৷ গড়ে সেই তালিকায় দেড় থেকে দুই হাজার যন্ত্রাংশ থাকে, যেগুলো বাতিল বিমান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷’

এবার পাইলটদের ককপিটে যাবার পালা৷ বিমান ফেরত নিয়ে যাবার এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ উড়ালের তুলনায় অনেক বেশি প্রস্তুতি লাগে৷ কারণ তেরুয়েল মোটেই প্রচলিত কোনো বিমানবন্দর নয়৷ সেখানে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও ইলেকট্রনিক গাইডেন্স সিস্টেম নেই৷ পাইলটদের তাই কাগজের মানচিত্রের ওপর নির্ভর করে বিমান ওড়াতে হয়৷

পাইলট হিসেবে মাটিয়াস হোহর্স্ট বলেন, ‘এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই৷ রানওয়ের দিকে এগোনোর সময় তথাকথিত ইউনিকম ফ্রিকুয়েন্সিতে কথা বলতে হয়৷ এই অঞ্চলে সব বিমানই নিজেদের মধ্যে সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কথা বলে৷ সেই ফ্রিকুয়েন্সিতে আমরা নিজেদের পরিকল্পনা জানিয়ে আকাশে উড়ি৷ আমাদের নির্দিষ্ট কোনো ডিপার্চার রুট থাকে না, যা সাধারণত এয়ার ট্রাফিক কনট্রোল দিয়ে থাকে৷ আমরা উত্তর দিকে রওনা হয়ে নিচে হাইওয়ে দেখে সারাগোসার দিকে উড়ে যাই৷ পথে কাছের এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ সেখান থেকে আমাদের আকাশে আরও উপরের স্তরে যাবার নির্দেশ আসে৷ তারপর থেকে স্বাভাবিকভাবে উড়াল চলে৷’

এয়ারবাস এ৩৪০ বিমানটির উড়ালের ছাড়পত্র পেতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগল৷ ফ্রাংকফুর্টে পৌঁছে বিমানটির আরো দুই সপ্তাহ ধরে রক্ষণাবেক্ষণ হলো৷ তারপরই সেটি যাত্রীবাহী রুটে চলার জন্য উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পেল৷ ছুটি কাটিয়ে আমেরিকা, আফ্রিকা বা এশিয়ায় চলাচল শুরু করল বিমানটি৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877